Home > Author > Nirad C. Chaudhuri >

" এই পণ্ডিতেরা দুই উদ্দেশ্যে আদিরসাত্মক কাব্যের ব্যাখ্যা করিতেন। প্রথমত, প্রৌঢ় বয়সে যুবতী স্ত্রীর অনুগ্রহ পাইবার জন্য। ভূঁড়ি, ঊর্ধ্বগামী ও অধােগামী নানাপ্রকার দুর্গন্ধ ইত্যাদির দ্বারা পত্নীকে প্রতিকূল করিয়া কামপ্রবৃত্তির সাহায্যে অনুকূল করিবার জন্য আদিরসাত্মক কবিতার সহায়তা লইতেন। বঙ্কিমচন্দ্র ইহা জানিতেন। তাই তিনি শান্তি সম্বন্ধে লিখিয়াছেন, পণ্ডিত “শান্তির অভিনব যৌবন বিকাশজনিত লাবণ্যে মুগ্ধ হইয়া ইন্দ্রিয় কর্তৃক পুনর্বার নিপীড়িত হইতে লাগিলেন। শিষ্যাকে আদিরসাশিত কাব্য সকল পড়াইতে লাগিলেন, আদিরসাশ্রিত কবিতাগুলির অশ্রাব্য ব্যাখ্যা শুনাইতে লাগিলেন। তাহাতে শান্তির কিছু অপকার না হইয়া উপকার হইল। লজ্জা কাহাকে বলে, শান্তি শিখে নাই; এখন স্ত্রীস্বভাবসুলভ লজ্জা আসিয়া আপনি উপস্থিত হইল।”

পণ্ডিতদের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, প্রকাশ্যে ছাত্রদের সঙ্গে বদরসিকতা করা - কোনও সময়ে প্রচ্ছন্নভাবে, কোনও সময়ে খােলাখুলি। ছাত্রেরা অধ্যাপকের উক্তি মাথা নীচু করিয়া শ্রদ্ধাসহকারে শুনিত। কিন্তু পরে নিজেদের কথাবার্তায় উহার উপর বেশ করিয়া নিজস্ব রং চড়াইত। একটু চাপা ভাবে এই উৎপাত আমাদের ছাত্রাবস্থাতেও কিছু কিছু ছিল। আশ্চর্যের কথা এই, রাগিলেও পণ্ডিত মহাশয়েরা এই অধঃপতিত কাম হইতেই ভৎসনার পারিপাট্য সাধন করিতেন। কলিকাতার এক পণ্ডিত মহাশয় রাগিলেই বলিতেন, “তাে ছোঁড়াদের যা অবস্থা তাতে তাে বিছানার চাদর কেচে জল খাইয়ে দিলে ছুঁড়ীদের পেট হয়ে যাবে।” ছাত্রেরাও অবশ্য যতটুকু পারে টেক্কা দিতে চেষ্টা করিত। একদিন এক পণ্ডিত মহাশয় গরমে অস্থির হইয়া পাঙ্খাটানাওয়ালাকে বলিয়াছিলেন, “খেঁচো!” ক্লাসসুদ্ধ ছাত্র উহা হিন্দী অর্থে না লইয়া কলিকাতার বাংলা সমাজে প্রচলিত বাংলা অর্থে নিয়া উচ্চ হাস্য করিয়া উঠিয়াছিল। "

Nirad C. Chaudhuri , বাঙালী জীবনে রমণী


Image for Quotes

Nirad C. Chaudhuri quote : এই পণ্ডিতেরা দুই উদ্দেশ্যে আদিরসাত্মক কাব্যের ব্যাখ্যা করিতেন। প্রথমত, প্রৌঢ় বয়সে যুবতী স্ত্রীর অনুগ্রহ পাইবার জন্য। ভূঁড়ি, ঊর্ধ্বগামী ও অধােগামী নানাপ্রকার দুর্গন্ধ ইত্যাদির দ্বারা পত্নীকে প্রতিকূল করিয়া কামপ্রবৃত্তির সাহায্যে অনুকূল করিবার জন্য আদিরসাত্মক কবিতার সহায়তা লইতেন। বঙ্কিমচন্দ্র ইহা জানিতেন। তাই তিনি শান্তি সম্বন্ধে লিখিয়াছেন, পণ্ডিত “শান্তির অভিনব যৌবন বিকাশজনিত লাবণ্যে মুগ্ধ হইয়া ইন্দ্রিয় কর্তৃক পুনর্বার নিপীড়িত হইতে লাগিলেন। শিষ্যাকে আদিরসাশিত কাব্য সকল পড়াইতে লাগিলেন, আদিরসাশ্রিত কবিতাগুলির অশ্রাব্য ব্যাখ্যা শুনাইতে লাগিলেন। তাহাতে শান্তির কিছু অপকার না হইয়া উপকার হইল। লজ্জা কাহাকে বলে, শান্তি শিখে নাই; এখন স্ত্রীস্বভাবসুলভ লজ্জা আসিয়া আপনি উপস্থিত হইল।”<br /><br />পণ্ডিতদের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, প্রকাশ্যে ছাত্রদের সঙ্গে বদরসিকতা করা - কোনও সময়ে প্রচ্ছন্নভাবে, কোনও সময়ে খােলাখুলি। ছাত্রেরা অধ্যাপকের উক্তি মাথা নীচু করিয়া শ্রদ্ধাসহকারে শুনিত। কিন্তু পরে নিজেদের কথাবার্তায় উহার উপর বেশ করিয়া নিজস্ব রং চড়াইত। একটু চাপা ভাবে এই উৎপাত আমাদের ছাত্রাবস্থাতেও কিছু কিছু ছিল। আশ্চর্যের কথা এই, রাগিলেও পণ্ডিত মহাশয়েরা এই অধঃপতিত কাম হইতেই ভৎসনার পারিপাট্য সাধন করিতেন। কলিকাতার এক পণ্ডিত মহাশয় রাগিলেই বলিতেন, “তাে ছোঁড়াদের যা অবস্থা তাতে তাে বিছানার চাদর কেচে জল খাইয়ে দিলে ছুঁড়ীদের পেট হয়ে যাবে।” ছাত্রেরাও অবশ্য যতটুকু পারে টেক্কা দিতে চেষ্টা করিত। একদিন এক পণ্ডিত মহাশয় গরমে অস্থির হইয়া পাঙ্খাটানাওয়ালাকে বলিয়াছিলেন, “খেঁচো!” ক্লাসসুদ্ধ ছাত্র উহা হিন্দী অর্থে না লইয়া কলিকাতার বাংলা সমাজে প্রচলিত বাংলা অর্থে নিয়া উচ্চ হাস্য করিয়া উঠিয়াছিল।