Home > Author > Imtiar Shamim
1 " আরেকদিন বাবা বলে, হয় পরম সমর্পণ নাহয় পরম একাকিত্ব,-এ যদি অর্জন করতে না পার তবে তুমি কালজয়ী দিক-নির্দেশক হতে পারবে না। আমাদের নবী আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন, তার জন্যে যথাযােগ্য সম্মানও পেয়েছেন তিনি। আবার চিন্তা কর গৌতম বুদ্ধের কথা, তিনিও ধর্মপ্রচারক, কিন্তু আদ্যোপান্ত নাস্তিক আর কি। তবুও তিনি তাঁর নিঃসঙ্গতা নিংড়ে নিংড়ে মানুষকে নির্বাণের পথ দেখিয়ে গেছেন। তুমি ধার্মিক না নাস্তিক, তুমি আশাবাদী না নিরাশাবাদী সেটা বড় ব্যাপার নয়, আসল কথা হলাে তুমি একাগ্র হতে পারছ কিনা। তােমার যে যন্ত্রণা সে যন্ত্রণাকে হাজার জনের যন্ত্রণার সঙ্গে এক করে ফেলতে পারছ কিনা। তা যদি পার দেখবে তােমার ব্যক্তিক আকাঙ্ক্ষা সমষ্টির চলার পথকে প্রশস্ত করছে, আর তুমি নিরাশাবাদী হলেও অন্ধকার এক পারাবারের যাত্রাপথে আলােকোজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে উঠেছ। "
― Imtiar Shamim , আমরা হেঁটেছি যারা
2 " আমাদের ক্যাপ্টেন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দিতেই মৌলবি স্যার নড়ে চড়ে উঠেন, "দাঁড়াও। এই জাতীয় পতাকা তো এখন পাল্টে যাবে(শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরদিন)। এটা তুলে আর কি হবে?"গেম স্যার মিন মিন করে বলার চেষ্টা করেন, তুলুক না। এখনও তো ঘোষণা দেয় নাই।.....মৌলভী স্যার তার বয়ান শুরু করেন। "এখন থেলে এসেম্বলি শুরু হবে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে। শপথ নেয়ার আগে সবাইকে সূরা ফাতেহা পড়তে হবে। যার যেরকম ইচ্ছা সেরকম পোশাক পরে আসা চলবে না। কেননা সরকার জাতীয় পোশাক ঠিক করেছে। ছাত্রদের সবাইকে পাজামা পাঞ্জাবি আর টুপি পরে আসতে হবে। ছাত্রীদের পরতে হবে সেলোয়ার কামিজের সঙ্গে বিছানার চাদরের মতো বড় ওড়না। আল্লাহ কখনো সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। মাদ্রাসা তুলতে চেয়েছিল, এখন সারা গুষ্টিসহ নিজেই উঠে গেছে।....ঐ জয় বাংলা কাদের স্লোগান? কাফেরদের, বুঝতে পেরেছ? জয় হিন্দের সঙ্গে মিলিয়ে স্লোগান বানিয়েছে জয় বাংলা। কেনো না ওরা মুসলমান ভাইদের একসঙ্গে থাকতে দিতে চায় নি। ওরা কখনো জয় বাংলাদেশ বলে না। কেনো? কারণ ওরা চায় শিক্ষা, ভাষা সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে দুই বাংলাকে এক করে ফেলতে। সব গালগপ্পো "
3 " বাবা বিয়ে করেছিল সংসার করার জন্যে; আরেক অর্থে অংশত যৌনতা অংশত একাকিত্ব দূর করতে। মানুষ কেন যে এখনও এই কথাটা সরাসরি স্বীকার করে না সারাজীবন এই যে সংসার করে, সংসারের ঘানি টানে, প্রজননক্ষমতা জাহির করে, ছেলেমেয়ে আত্মীয়স্বজনে ঘিরে স্নেহমায়ার ভাবালু আবরণ তৈরি ভালোমানুষের সার্টিফিকেট নেয়ার চেষ্টা করে তা আসলে তার নিঃসঙ্গতা দূর করার প্রাণান্তকর চেষ্টা, -তা বুঝতে পারি না আমি। "
4 " পুরুষের প্রধান সমস্যাটা আসলে এইখানে যে সে সবার কাছে কোনও না কোনওভাবে আলাদা আইডেনটিটি চায়। যাদের প্রতিভা আছে প্রতিভার বাহাদুরি দেখিয়ে, যাদের নেই তারা আর কিছু না হোক শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাবা হয়ে। মেয়েরা প্রাকৃতিকভাবেই একটা আইডেনটিটি পেয়ে যায়, মা হওয়ার আইডেনটিটি। পুরুষ অত সুস্পষ্টভাবে বাবা হওয়ার আইডেনটিটি তো আর দাবি করতে পারে না। দাবি যাতে করতে পারে সে জন্যেই সম্পত্তির বোধ প্রতিষ্ঠা করা, সম্পত্তির কর্তৃত্বসংক্রান্ত আইনের মধ্যে দিয়ে প্রকারান্তরে নিজের একটা আইডেনটিটি প্রতিষ্ঠা করা। "
5 " কোনওদিন বাবা বলে, দেখ মানুষের শক্তি কেমন! সে এমন সঙ্গীত তৈরি করতে পারে যার তরঙ্গ শুনেই তােমার মনে বৃষ্টি নামে, সে এমন বাক্য উচ্চারণ করে শােনার পরেই তােমার মনে দৃশ্যকল্প জেগে ওঠে। এমন হতে পারে কোনওদিন তুমি হয়তাে-বা খোঁড়া হয়ে গেছ কিংবা দিনের পর দিন কারাগারের অন্তরালে দিন কাটাচ্ছ, কিন্তু তুমি চোখ খােলা রেখে চিন্তা করলেও হয়তাে-বা এই গ্রামের পথটাকে দেখতে পাবে। তােমার মনে হবে তুমি সেই পথ দিয়ে আবারও হেঁটে যাচ্ছ। ঠিক এমনিভাবে, এমনিভাবে তােমার গায়ে শিশিরকণা ঝরে পড়ছে, ভােরের আলাে তােমার মুখে উদ্ভাসিত হচ্ছে, মৃদু বাতাসে তােমার রাতের দুঃস্বপ্ন মুছে যাচ্ছে। তুমি জানাে এসবই বিভ্রম আসলে, কিন্তু তােমার মনে হবে। তুমি সেই দৃশ্যকল্পের জগতে ঘুরতে ঘুরতে কাঁদবে এবং চোখ মুছবে, আবার কাঁদবে এবং চোখ মুছবে। কিন্তু দেখবে এই বিভ্রমের জন্যে তােমার কোনও গ্লানি হবে না। বরং এক অনাবিল আনন্দে তােমার মন ভরে উঠবে। আসলে আমরা এক-একটা স্মৃতি নির্মাণ করি সে স্মৃতিকে হত্যা করবার জন্যে, কিন্তু তা স্মৃতি-ঘরে জমা থাকে আর তােমার সামনে যাওয়ার গ্লানিকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্যে কখনও সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। "