Home > Work > ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না

ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না QUOTES

3 " আমাদের গাঁয়ের অধিকাংশ লোক গোলাপ দেখে নি, ঘ্রাণ চায় নি গোলাপের। তারা দেখে নি কোনো চোখ-ঝলসানো নাচ, কোনো দিন দেখার স্বপ্নও দেখে নি। কবিতা পড়ে নি তারা, কোনোদিন পড়ার কথা ভাবে নি। কখনো তাদের বুক থেকে চোখের জলের মতো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে নি এ-কথা ভেবে যে এ-জীবনে তাদেরও একটি কবিতা পড়া হলো না। কেউ রাজা হ'তে চায় নি তারা। জরির পোশাক প'রে গোঁফ রেখে ধারালো তলোয়ার হাতে ক'রে ফিরতে চায় নি কেউ তারা। তারা চেয়েছে ভাত। স্বপ্ন দেখেছে মধুর মতো, তারার মতো, চাঁদের মতো, কড়িফুলের মতো ভাতের আর ভাতের আর ভাতের। জেগে উঠে দেখেছে সামনে প'ড়ে আছে শূন্য মাটির বাসন। "

Humayun Azad , ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না

4 " সবাই চ'লে গেছে, ঘোলা হয়ে আছে আমাদের পুবপুকুরের টলটলে জল। ভীষণ বিষণ্ন দেখায় পুকুরটিকে। ঘন ঘোলা পানি শব্দ করে না, কলকল করে না, নিথরভাবে প'ড়ে থাকে। তাতে ভাসতে থাকে ছিঁড়েফাড়া কচুরিপানা - এদিকে ভাসে ওদিকে ভাসে। মনে হয় কাঁদে। ঘোলা জলে কচুরিপানার ছবি গেঁথে আছে আমার চোখে। যখন আমি এ-শহরে, শহরকে আমার অনেক সময় ঘোলাজলের পুকুর ব'লেই মনে হয়, কাউকে ঘুরতে দেখি একা একা - বিষন্ন, মলিন উস্কোখুস্কো, তখনি মনে পড়ে মানুষ নামার পরে পুবপুকুরের ঘোলাজলে ভাসমান জীর্ণ কচুরিপানাগুলোকে। এমন কচুরিপানা-মানুষ দেখেছিলাম আমি একাত্তুরের সাতাশে মার্চে। পঁচিশে মার্চের আক্রমণ ও ছাব্বিশে মার্চের সান্ধ্য আইনের পরে সাতাশে মার্চে ঢাকা শহরের মানুষেরা বেরিয়ে পড়েছিলো রাস্তায় - হাঁটছিলো, ভয় পাচ্ছিলো, নিরুদ্দেশ পথ চলছিলো, ঠিক যেনো আমাদের পুকুরে মানুষ নামার পরে ঘোলা জলে এলোমেলো ভাসমান ছিন্নভিন্ন কচুরিপানার দল। "

Humayun Azad , ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না