Home > Work > সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি QUOTES

1 " বিজনের রক্তমাংস’ তো ‘পরিচয়’ পত্রিকা ফেরত পাঠিয়েছিল। এগুলোই আমায় পার্টি থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আসলে তখন আমি ভেবে দেখলাম – এভাবে হবে না। কারণ, এর আগে আমি যত কমিটেড লেখা লিখেছি সেগুলো কিন্তু যথারীতি গুরুত্ব দিয়েই ছাপা হয়েছিল। দীপেন নিজের হাতে ‘বিজনের রক্তমাংস’ ফেরত দিয়ে যায়। যদিও পরে এ ঘটনাটা নিয়ে দেবেশ রায় আমাকে বলেছিল, ‘তুমি কি করে ভাবলে দীপেন ওই লেখা ফেরত দিল?’ পরে আমি ভেবে দেখেছি, দেবেশই ঠিক বলেছিল। কারণ তখন তো সম্পাদক ছিলেন সত্য গুপ্ত, যিনি পরবর্তীকালে এমএল পার্টিতে যোগ দেন। দীপেন সত্যবাবুর বাতিল করে দেওয়া লেখাটা কেবলমাত্র আমার হাতে তুলে দিতে এসেছিল। পরবর্তীকালে ‘বিজনের রক্তমাংস’ যখন ছাপা হয় তখন দীপেন ভূয়সী প্রশংসা করেছিল। ওই সময়েই তো ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’ ছাপা হল। আউট-স্ট্যান্ডিং স্টোরি! ওইরকম গল্প হয়তো আর লেখা হবে না। হয়ওনি। "

Sandipan Chattopadhyay , সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি

2 " বিশ্বস্তসূত্রে এই উড়োখবর আমরা পাই যে শক্তি চাইবাসার সেন্ট্রাল জেলে রয়েছে, তছরুপের কথাই আমি শুনি । এটা শুনে, তখন আমরা ছেলেমানুষ ছিলুম বলে, আমার ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের খুব মনোকষ্ট হয় । আমি ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তির দুই বন্ধু, আমরা সেদিন রাত্রেই, সম্বলপুর প্যাসেঞ্জার ধরি । এটা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ । আমি নিই হাওড়ার চেনা দোকান থেকে তিনটে খালি সোডার বোতল, চাইবাসায় এক্সচেঞ্জ করার কথা ভেবে, এটা সুনীলও যুক্তিযুক্ত মনে করেছিল । সুনীল একটা ক্যাপস্টানের টিন নিয়েছিল, যা গরাদের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে ডোরাকাটা শক্তির হাতে ওর দেবার ইচ্ছে ছিল । টিনটা আমরা ট্রেনে খুলিনি । মাইরি ।”

“চাইবাসায় গিয়ে এবারও সমীরকে পেলুম না, ট্যুরে । কিন্তু শক্তি ? পরদিন জেলে গিয়ে খবর নিলেই হবে এরকম ভেবে, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে টিনটা ও ওপরে তিনটে সোডার বোতল রেখে, ডাকবাংলো ছেড়ে আমরা বেরিয়ে পড়লুম নদীর দিকে, চাইবাসার শ্মশানের দিকে শীতের রাত্তিরে আমরা এগিয়ে যেতে লাগলুম গান গাইতে গাইতে । মধুটোলার কাছে ফটাস করে একটা বাড়ির দরোজা খুলে গেল, ‘এতো রাত্তিরে চাইবাসায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় কে রে’, বলতে বলতে শক্তি বেরিয়ে এলো । এখানে হঠাৎই মনে পড়ল, এই মধুটোলার রাস্তাতেই, ‘সাইকেল কি সাঁতার কেউ কখনো ভোলে ভাই’, বলে তড়া "

Sandipan Chattopadhyay , সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি

3 " সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি:

১) ঘুম মানুষের অচেতন নগ্নতা, সচেতন নগ্নতা হল, যখন ডাক্তার দেখে। বিশেষত গায়নোকোলোজিস্ট।
২) আনন্দ একটা জটিল আবেগ, শোকও তাই।
৩) আবেগসমূহের মধ্যে ভয়, আহ্লাদ, ক্রোধ এগুলোর মধ্যে জটিলতা নেই। এগুলো সরল প্রকৃতির।
৪) শুধু মানুষ মরণশীল নয় তা তো নয়- সম্পর্কও মরণশীল।
৫) আমি ভালোবাসায় বিশ্বাস করি। যেখানে ভালোবাসা নেই, আমি সেই অবস্থান স্বীকার করি না।
৬) লেখক কোন অভিজ্ঞতার ভিতরে থেকে লিখতে পারে না। সে বেরিয়ে আসে অভিজ্ঞতা থেকে বা অভিজ্ঞতাই তাকে অভিজ্ঞতার বাইরে ঠেলে দেয়।
৭) বড় হবার পর প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে পরের দেওয়া নাম গ্রহন অথবা বর্জন করে নিজে নাম রাখার। এ তার মৌলিক অধিকার।
৮) জীবনে বাংলা ডিক্সনারি দেখিনি। খুলিনি। শ্রেষ্ঠ বাংলা ভাষা জানি। জীবনে একটা নারী নেই। শ্রেষ্ঠ যৌনমনা। একটা কলম পেলাম না যার মন আছে।
৯) এখন বেলচার মত কলমের পেছনটা ধরে ঠেলছি। হ্যাঁ, এটা কোদালই। কলম নয় কিছুতেই। "

Sandipan Chattopadhyay , সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি