Home > Author > Kazi Nazrul Islam

Kazi Nazrul Islam QUOTES

1 " আবার যখন এমনি আশ্বিন মাস আসবে- এমনি সন্ধ্যা আসবে- তখন কি করব বলতে পার?
শিউলি তার দু’চোখ ভরা কথা নিয়ে আমার চখের উপর যেন উজাড় ক’রে দিল। তারপর ধীরে ধীরে বলল,-- “শিউলি ফুলের মালা নিয়ে জলে ভাসিয়ে দিও!”
আমি নীরবে সায় দিলাম- তাই হবে! জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কি করবে?” সে হেসে বলল, “আশ্বিনের শেষে ত শিউলি ঝরেই পড়ে।”
আমাদের চোখের জল লেগে সন্ধ্যাতারা চিকচিক ক’রে উঠল।
রাত্রে দাবা- খেলার আড্ডা বসল। প্রফেসর চৌধুরী আমার কাছে হেরে গেলেন। আমি শিউলির কাছে হেরে গেলাম! জীবনে আমার সেই প্রথম এবং শেষ হার। আর সেই হারাই আমার গলার হার হয়ে রইল।
সকালে যখন বিদায় নিলাম- তখন তাদের বাংলোর চার পাশে উইলোতরু তুষারে ঢাকা পড়েছে!
আর তার সাথে দেখা হয়নি- হবেও না! একটু হাত বাড়ালেই হয়ত ছুঁতে পারি তাকে, এত কাছে থাকে সে। তবু ছুঁতে সাহস হয় না। শিউলি ফুল- বড় মৃদু, বড় ভিরু, গলায় পরলে দু দণ্ডে আউরে যায়। তাই শিউলি ফুলের আশ্বিন যখন আসে – তখন নীরবে মালা গাঁথি আর জলে ভাসিয়ে দিই। "

Kazi Nazrul Islam , শিউলি মালা

6 " কারার ঐ লৌহ–কপাট
ভেঙ্গে ফেল্‌ কর্‌ রে লোপাট রক্ত –জমাট
শিকল –পূজার পাষাণ –বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় –বিষাণ ! ধ্বংস –নিশান
উঠুক প্রাচী –র প্রাচীর ভেদি’।।
গাজনের বাজনা বাজা!
কে মালিক? কে সে রাজা? কে দেয় সাজা
মুক্ত –স্বাধীন সত্য কে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান প’রবে ফাঁসি? সর্বনাশী –
শিখায় এ হীন্‌ তথ্য কে রে?

ওরে ও পাগ্‌লা ভোলা, দেরে দে প্রলয় –দোলা গারদগুলা
জোরসে ধ’রে হ্যাঁচকা টানে।
মার্‌ হাঁক হায়দরী হাঁক্‌ কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক ডাক ওরে ডাক
মৃত্যুকে ডাক জীবন –পানে।।

নাচে ঐ কাল –বোশেখী, কাটাবি কাল ব’সে কি?
দে রে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি’।
লাথি মার, ভাঙ্‌রে তালা! যত সব বন্দী–শালায়–
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল্‌ উপাড়ি।। "

Kazi Nazrul Islam

8 " আমাকে বিদ্রোহী বলে খামখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এ নিরীহ জাতটাকে আঁচড়ে-কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা আমার কোনদিনই নেই। আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, যা মিথ্যা-কলুষিত-পুরাতন-পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।

যেদিন আমি চলে যাব, সেদিন হয়ত বা বড় বড় সভা হবে। কত প্রশংসা কত কবিতা বেরুবে হয়ত আমার নামে। দেশপ্রেমী,ত্যাগী,বীর,বিদ্রোহী- বিশেষনের পর বিশেষন। টেবিল ভেঙে ফেলবে থাপ্পর মেরে। বক্তার পর বক্তা। এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রার্থ্য দিনে বন্ধু তুমি যেন যেও না। যদি পার চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ কোর। তোমার ঘরের আঙিনায় বা আশেপাশে যদি একটি ঝরা পায়ে পেষা ফুল পাও, সেইটিকে বুকে চেপে বোল বন্ধু আমি তোমায় পেয়েছি। তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না, কোলাহল করে সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না। নিশ্চল নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ। "

Kazi Nazrul Islam , Kazi Nazrul Islam: Selected Prose

13 " আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন। তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহারই যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নের মার্তণ্ডপ্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার ঔদার্য, অফুরন্ত যাহার প্রাণ, অটল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে। তারুণ্য দেখিয়াছি আরবের বেদুইনদের মাঝে, তারুণ্য দেখিয়াছি মহাসমরে সৈনিকের মুখে, কালাপাহাড়ের অসিতে, কামাল-করিম-মুসোলিনি-সানইয়াৎ লেনিনের শক্তিতে। যৌবন দেখিয়াছি তাহাদের মাঝে—যাহারা বৈমানিকরূপে অনন্ত আকাশের সীমা খুঁজিতে গিয়া প্রাণ হারায়, আবিষ্কারকরূপে নব-পৃথিবীর সন্ধানে গিয়া আর ফিরে না, গৌরীশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করিতে গিয়া যাহারা তুষার-ঢাকা পড়ে, অতল সমুদ্রের নীল মঞ্জুষার মণি আহরণ করিতে গিয়া সলিলসমাধি লাভ করে, মঙ্গলগ্রহে, চন্দ্রলোকে যাইবার পথ আবিষ্কার করিতে গিয়া নিরুদ্দেশ হইয়া যায়। পবন-গতিকে পশ্চাতে ফেলিয়া যাহারা উড়িয়া যাইতে চায়, নব নব গ্রহ-নক্ষত্রের সন্ধান করিতে করিতে যাহাদের নয়ন-মণি নিভিয়া যায়—যৌবন দেখিয়াছি সেই দুরন্তদের মাঝে। যৌবনের মাতৃরূপ দেখিয়াছি—শব বহন করিয়া যখন সে যায় শ্মশানঘাটে, গোরস্থানে, অনাহারে থাকিয়া যখন সে অন্ন পরিবেশন করে দুর্ভিক্ষ বন্যা-পীড়িতদের মুখে, বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে যখন সে রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া পরিচর্যা করে, যখন সে পথে পথে গান গাহিয়া ভিখারী সাজিয়া দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য ভিক্ষা করে, যখন দুর্বলের পাশে বল হইয়া দাঁড়ায়, হতাশের বুকে আশা জাগায়। "

Kazi Nazrul Islam